আধুনিক ইতিহাসের জনক কে বিস্তারিত জেনে নিন
আধুনিক ইতিহাসের জনক কে জানেন না? আজকের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে আধুনিক ইতিহাসের জনক কে, ইতিহাসের জনক সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য জানতে পারবেন। আধুনিক ইতিহাসের জনক কে এবং তাকে কেন আধুনিক ইতিহাসের জনক বলা হয় ও আধুনিক ইতিহাস সৃষ্টিতে তার কী কী অবদান রয়েছে এসবকিছুই জানবো আমরা এই পোস্টে।
ইতিহাসের জনক এবং আধুনিক ইতিহাসের জনক একজন ব্যক্তি নন। ইতিহাসের জনক একজন এবং আধুনিক ইতিহাসের জনক অন্য একজন। আধুনিক ইতিহাসের জনক কে এবং তাকে কেন আধুনিক ইতিহাসের জনক বলা হয় তা আমরা অনেকেই জানি না। তো চলুন, আধুনিক ইতিহাসের জনক সম্পর্কে বিস্তারিত এবং অজানা কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।
ইতিহাস কী
ইতিহাস, কেবল অতীতের ঘটনাবলীর বিবরণ নয়, বরং সময়ের সাথে সাথে মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের আখ্যান। এটি বহু শতাব্দীর জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, সংগ্রাম, সাফল্য ও ব্যর্থতার এক বিশাল ভাণ্ডার।
ইতিহাস আমাদের জানায় কীভাবে আজকের পৃথিবী গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্রের উত্থান-পতন, সভ্যতার বিকাশ, যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলন, শিল্প-সাহিত্যের অগ্রগতি – এসবের মূল কারণ অনুসন্ধান করে ইতিহাস।
ইতিহাস কেবল অতীতের কাহিনীই বলে না, বর্তমানের প্রেক্ষাপট বুঝতেও সাহায্য করে। আমাদের পূর্বপুরুষদের ভুল ও ত্রুটি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা ভবিষ্যতের জন্য সঠিক পথ নির্ধারণ করতে পারি। ইতিহাস আমাদের গর্ব ও আত্মবিশ্বাসের উৎস। আমাদের পূর্বপুরুষদের শৌর্য-বীর্য ও ত্যাগ আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
এছাড়াও, ইতিহাস আমাদের সহনশীলতা ও মনোবল বৃদ্ধি করে। অতীতের সংকট ও বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েও মানুষ কীভাবে টিকে ছিল, তা জানলে আমরাও বর্তমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহসী হতে পারি।
ইতিহাসের জনক কে
“ইতিহাসের জনক” বলতে কাকে বোঝায়, এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, গ্রীক ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস (খ্রিস্টপূর্ব 484 – 425) ইতিহাসের জনক। কারণ তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি লিখিতভাবে ইতিহাসের ধারণা দেন। তবে, অনেকে মনে করেন, হেরোডোটাসের আগেও অনেক ইতিহাসবিদ ছিলেন যারা লিখিত বা মৌখিকভাবে ইতিহাসের বর্ণনা করেছিলেন।
আবার, কেউ কেউ বলেন, “ইতিহাসের জনক” বলতে ইতিহাসের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবর্তককে বোঝায়। এই দিক থেকে, জার্মান ইতিহাসবিদ লিওপল্ড ফন র্যাঙ্কে (1795 – 1886) কে ইতিহাসের জনক বলা যেতে পারে। কারণ তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ইতিহাস রচনায় বস্তুনিষ্ঠতা ও ঐতিহাসিক তথ্যের যাচাই-বাছাইয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
তবে, ইতিহাসের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিকাশে র্যাঙ্কের পূর্বেও অনেক ইতিহাসবিদের অবদান ছিল। পরিশেষে বলা যায়, “ইতিহাসের জনক” কে তা নির্ধারণ করা বেশ জটিল। কারণ, ইতিহাসের ধারণা দীর্ঘ সময় ধরে বিকশিত হয়েছে এবং এতে অনেকের অবদান রয়েছে।
আধুনিক ইতিহাস কী
ইতিহাসের দীর্ঘ ধারায়, আধুনিক ইতিহাস একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ষোড়শ শতাব্দীর শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিস্তৃত এই সময়কালে মানব সভ্যতা ব্যাপক পরিবর্তন ও অগ্রগতি লাভ করে।
আধুনিক ইতিহাসের কেন্দ্রে রয়েছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব বিকাশ। রেনেসাঁ, ধর্মপ্রতিক্রিয়া, বৈজ্ঞানিক বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব, ঔপনিবেশিকতার সম্প্রসারণ, বিশ্বযুদ্ধ, ঔপনিবেশিক বিশ্বের স্বাধীনতা আন্দোলন, প্রযুক্তির অগ্রগতি, তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ফোরণ – এসবই আধুনিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
এই ঘটনাবলীর প্রভাবে রাষ্ট্র, সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি – সকল ক্ষেত্রেই আমূল পরিবর্তন এসেছে। জ্ঞানের আলোয় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ধারণা। আধুনিক ইতিহাস শুধু অতীতের ঘটনাবলীর বর্ণনা নয়, বরং বর্তমানের প্রেক্ষাপট বুঝতে এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা পেতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে।
আধুনিক ইতিহাসের জনক কে
ইতিহাসের জ্ঞান মানব সভ্যতার অগ্রগতির ধারক ও বাহক। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ তাদের অতীতের ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করে আসছে। কিন্তু আধুনিক ইতিহাসের ধারণা তৈরি হয়েছে অনেক পরে। আধুনিক ইতিহাস বলতে বোঝায় ষোড়শ শতাব্দীর পরবর্তী সময়ের ঘটনাবলীর বর্ণনা। এই সময়কালে ইউরোপে রেনেসাঁ ও ধর্মপ্রতিক্রিয়া আন্দোলনের প্রভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটে। এর ফলে ইতিহাস রচনার দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তিত হয়।
আধুনিক ইতিহাসের জনক কে? আধুনিক ইতিহাসের জনক হচ্ছেন লিওপল্ড ফন র্যাঙ্ক (১৭৯৫-১৮৮৬) । তিনি ছিলেন একজন জার্মান ইতিহাসবিদ। র্যাঙ্কে ইতিহাস রচনায় বস্তুনিষ্ঠতা ও ঐতিহাসিক তথ্যের যাচাই-বাছাইয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর কারণ-কার্য সম্পর্ক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইতিহাসকে একটি বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন।
র্যাঙ্কের পূর্বে ইতিহাস রচনা প্রায়শই কাল্পনিক ও পক্ষপাতদুষ্ট হত। র্যাঙ্কের অবদানের ফলে ইতিহাস রচনায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবর্তন হয় এবং আধুনিক ইতিহাসবিদদের দিকনির্দেশনা স্থাপিত হয়।
বৈজ্ঞানিক ইতিহাস এর জনক কে
“বৈজ্ঞানিক ইতিহাস” বলতে বোঝায় ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর বস্তুনিষ্ঠ ও বিশ্লেষণাত্মক বর্ণনা। এই ধারণার বিকাশে জার্মান ইতিহাসবিদ লিওপল্ড ফন র্যাঙ্কের (1795-1886) অবদান অনস্বীকার্য। তাই তাকে “বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের জনক” হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
র্যাঙ্কের পূর্বে ইতিহাস রচনায় প্রায়শই কাল্পনিক ও পক্ষপাতদুষ্ট তথ্যের ব্যবহার হত। র্যাঙ্কে এই প্রবণতা থেকে দূরে সরে ঐতিহাসিক তথ্যের যাচাই-বাছাই ও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর কারণ-কার্য সম্পর্ক উন্মোচনের চেষ্টা করেন এবং ঐতিহাসিক নথিপত্রের সমালোচনামূলক পর্যালোচনার মাধ্যমে সত্য উদ্ধারের পদ্ধতি প্রবর্তন করেন।
র্যাঙ্কের অবদানের ফলে ইতিহাস রচনায় একটি নতুন যুগের সূচনা হয়। ঐতিহাসিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যমে ইতিহাসকে একটি স্বতন্ত্র জ্ঞানের শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে র্যাঙ্কের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসের জনক কে
“বাংলাদেশের ইতিহাসের জনক” কে তা নির্ধারণ করা বেশ জটিল। কারণ, বাংলাদেশের ইতিহাস দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ, এবং এতে অনেক ব্যক্তির অবদান রয়েছে। কিছু কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের জনক হলেন নবীনচন্দ্র সেন (১৮৪৭-১৯২৮)। কারণ তিনিই প্রথম বাঙালি ঐতিহাসিক যিনি বাংলা ভাষায় বঙ্গদেশের ইতিহাস রচনা করেন।
অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের জনক হলেন রমেশচন্দ্র মজুমদার (১৮৮৮-১৯৮০)। কারণ তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের উপর ব্যাপক গবেষণা পরিচালনা করেন এবং “বাংলার ইতিহাস” নামে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন।
আবার, কেউ কেউ বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের জনক হলেন আবদুল করিম (১৮৯৭-১৯৮০)। কারণ তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে মুসলিম শাসনকালের উপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পরিচালনা করেন।
লিওপোল্ড ভন র্যাংকে আধুনিক ইতিহাসের জনক বলা হয় কেন
লিওপোল্ড ফন র্যাংকে (১৭৯৫-১৮৮৬) একজন জার্মান ইতিহাসবিদ ছিলেন, যাকে আধুনিক ইতিহাসের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। র্যাংকের পূর্বে ইতিহাস রচনায় প্রায়শই কাল্পনিক ও পক্ষপাতদুষ্ট তথ্যের ব্যবহার হত। র্যাংকে এই প্রবণতা থেকে দূরে সরে ঐতিহাসিক তথ্যের যাচাই-বাছাই ও বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
র্যাংকের অবদানের ফলে ইতিহাস রচনায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবর্তন হয়। ঐতিহাসিক গবেষণায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগের মাধ্যমে ইতিহাসকে একটি স্বতন্ত্র জ্ঞানের শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে র্যাংকের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়।
প্রাচীন ইতিহাস তত্ত্বের জনক কে
“প্রাচীন ইতিহাস তত্ত্বের জনক” কে তা নির্ধারণ করা বেশ জটিল। কারণ, প্রাচীন ইতিহাসের ধারণা দীর্ঘ সময় ধরে বিকশিত হয়েছে এবং এতে অনেকের অবদান রয়েছে। কিছু কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, প্রাচীন ইতিহাস তত্ত্বের জনক হলেন হেরোডোটাস (খ্রিস্টপূর্ব 484 – 425)। কারণ তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি লিখিতভাবে ইতিহাসের ধারণা দেন।
অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করেন, হেরোডোটাসের পূর্বেও অনেক ইতিহাসবিদ ছিলেন যারা লিখিত বা মৌখিকভাবে ইতিহাসের বর্ণনা করেছিলেন।
শেষ কথা
আজকের এই পোস্টে ইতিহাস কী, আধুনিক ইতিহাসের জনক কে, আধুনিক ইতিহাস কী, আধুনিক ইতিহাসের জনক কে এসব বিষয় নিয়ে অনেক অজানা তথ্য শেয়ার করেছি। এছাড়াও, বৈজ্ঞানিক ইতিহাসের জনক কে, বাংলাদেশের ইতিহাসের জনক কে, প্রাচীন ইতিহাস তত্ত্বের জনক কে এসব বিষয় নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছি। পোস্টটি শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়লে আশা করছি আধুনিক ইতিহাস কী এবং আধুনিক ইতিহাসের জনক কে তা বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আরও এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে প্রতিদিন আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। এছাড়াও, এই সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য জানতে পুরো ওয়েবসাইট ঘুরে দেখতে পারেন।
Tag:
কাকে আধুনিক ইতিহাসের জনক বলা হয় mcq
প্রাচীন ইতিহাস তত্ত্বের জনক কে
লিওপোল্ড ভন র্যাংকে আধুনিক ইতিহাসের জনক বলা হয় কেন
আধুনিক ইসলামের ইতিহাসের জনক কে