আকিকার নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানুন

সন্তান জন্মের ৭ দিন পর আকিকা করতে হয়। আকিকা করার পর সন্তানের নামকরণ করতে হয়।আকিকার নিয়ম ও দোয়া, আকিকা করা এবং নাম রাখা বাবা-মায়ের উপর সন্তানের হক। আর ইসলাম মেনে চলতে হয় অবশ্যই সন্তানের আকিকা করতে হয়। সন্তানের আকিকা করার জন্য অবশ্যই আকিকা করার নিয়ম মানতে হবে। আকিকার নিয়ম ও দোয়া জানা না থাকলে এই পোস্টটি আপনার জন্যই।
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আকিকার নিয়ম ও দোয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনি যদি সন্তানের আকিকা করতে চান কিন্তু আকিকার নিয়ম ও দোয়া না জেনে থাকেন, তাহলে পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়ুন। এতে করে আকিকা কীভাবে করতে হয়, আকিকা করতে কি কি লাগে, ছেলে সন্তানের আকিকা করার নিয়ম এবং মেয়ে সন্তানের আকিকা করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে পারবেন।
তো চলুন, আকিকার নিয়ম ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেয়া যাক।

আকিকা কি বা আকিকা কাকে বলে?
আকিকা শব্দটি একটি আরবি শব্দ। এটি আরবি عَقٌّ শব্দ থেকে আগত একটি শব্দ। আকিকা শব্দের অর্থ হচ্ছে কাটা, পৃথক করা ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে ৭ম দিনে নবজাতক শিশুর মাথার চুল মুণ্ডন করার সময় যবেহকৃত পশুকে আকিকা বলা হয়। অর্থাৎ, সন্তান জন্মের ৭ম দিনে সন্তানের চুল মুণ্ডন করে দেয়ার সময় হালাল পশু জবাই করতে হয়, একে আকিকা বলে।
ছেলে সন্তান হোক কিংবা মেয়ে সন্তান, আকিকা করাতে হবে। আকিকা করার পাশাপাশি সন্তানের জন্য সুন্দর একটি ইসলামিক নাম রাখতে হয়। নাম রাখার সময় সুন্দর অর্থ আছে এমন একটি নাম রাখতে হবে।
আকিকার নিয়ম ও দোয়া
ইসলাম মেনে চলতে হয় সন্তান জন্মের ৭ম দিনে আকিকা করতে হয়। তবে, ৭ম দিনে যদি আকিকা করাতে না পারে তাহলে ১৪তম দিনে আকিকা করাতে হবে। যদি ১৪ তম দিনেও আকিকা করা সম্ভব না হয়, তাহলে ২১ তম দিনে আকিকা করাতে হবে। ২১ তম দিনেও আকিকা করা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে যেকোনো সময় আকিকা করতে হবে।
আকিকা করার পাশাপাশি সন্তানের নামকরণ করতে হয় এবং মাথা মুণ্ডন করে দিতে হয়। মাথা মুণ্ডন করে দেয়া বলতে সন্তানের মাথার চুল নেড়া করে দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে, আকিকা পরে করলেও সমস্যা নেই। কিন্তু সন্তানের জন্য সুন্দর এবং ইসলামিক নাম রাখা পিতার প্রতি সন্তানের হক। এছাড়া, সন্তান জন্মের পর তার মাথার চুল মুণ্ডন করে দিতে হয়।
আকিকা করা প্রসঙ্গে একটি হাদিস রয়েছে, এটি হচ্ছে, হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধকস্বরূপ। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে জবাই করবে এবং তারা মাথা মুণ্ডন করে নাম রাখবে’ (সুনানে আবু দাউদ : ২/৩৯২)।
অন্য হাদিসে আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সন্তানের সঙ্গে আকিকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত কর (অর্থাৎ পশু যবাই কর) এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৭২)
আকিকা করার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। নিয়ম অনুসরণ করে আকিকা করা না হলে সেই আকিকা হবেনা। তাই, আপনার ছেলে সন্তান হলে ছেলেদের আকিকা করার নিয়ম অনুসরণ করে আকিকা করাবেন এবং মেয়ে সন্তান হলে মেয়েদের আকিকা করার নিয়ম অনুসরণ করে আকিকা করাবেন। নিচে ছেলে এবং মেয়ে উভয় সন্তানের আকিকা করার নিয়ম এবং দোয়া উল্লেখ করে দিয়েছি।
ছেলে সন্তানের আকিকার নিয়ম ও দোয়া
ছেলে সন্তানের আকিকা করার জন্য দুইটি ছাগল/দুম্বা/উট/গরু জবাই করতে হবে। এছাড়াও, আকিকা করার দিন তার মাথার চুল মুণ্ডন করে দিতে হবে। সন্তান জন্মের ৭ম দিনে আকিকা করাতে হয়। তবে, যদি কোনো কারণে ৭ম দিনে আকিকা করা সম্ভব না হয়, তাহলে ১৪তম দিনে আকিকা করাতে হবে। যদি ১৪ তম দিনেও আকিকা করা সম্ভব না হয় তবে ২১তম দিনে আকিকা করাতে হবে।
২১তম দিনেও আকিকা করা সম্ভব না হলে পরবর্তীতে যেকোনো সময় আকিকা করা যাবে। তবে, ছেলে সন্তানের আকিকা করার জন্য অবশ্যই হালাল পশুর দুইটি অংশ দিয়ে আকিকা করাতে হবে।
মেয়ে সন্তানের আকিকার নিয়ম ও দোয়া
মেয়ে সন্তানের জন্মের ৭ম দিনে আকিকা করতে হয়। মেয়ে সন্তানের জন্য আকিকা করতে একটি ছাগল/দুম্বা/উট/গরু জবাই করতে হবে। অর্থাৎ, মেয়ে সন্তানের আকিকা করার জন্য হালাল পশুর যেকোনো একটি অংশ আকিকা করতে হবে। ছেলে সন্তানের আকিকা করতে দুইটি পশু লাগলেও মেয়ে সন্তানের আকিকা করতে একটি পশু লাগবে।
আকিকার নিয়ম ও দোয়া , আকিকা করার সময় চেষ্টা করবেন ছাগল বা দুম্বা দিয়ে আকিকা করার। তবে, গরু বা উট দিয়েও আকিকা করা যাবে। মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রেও সন্তান জন্মের ৭ম দিনে আকিকা করতে হবে। যদি ৭ম দিনে না হয়, তাহলে ১৪তম দিনে বা ২১ তম দিনে করতে হবে। তবু সম্ভব না হলে পরবর্তীতে যেকোনো সময় করতে হবে।
উপরোক্ত নিয়মগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে ছেলে সন্তানের এবং মেয়ে সন্তানের আকিকা করাতে পারবেন। তবে, আকিকা করার সময় অবশ্যই সন্তানের চুল মুণ্ডন করে দিবেন। এছাড়াও, আকিকা করার দিন সন্তানের নামকরণ করতে হবে। নাম রাখার সময় ইসলামিক নাম রাখতে হবে। নামের অর্থ যেন ভালো হয়, তাৎপর্যপূর্ণ হয় এবং অর্থবহুল হয় এমন নাম রাখতে হবে।

আকিকার গোশত কিভাবে বন্টন করতে হয়?
আকিকা করার পর এর গোশতের বণ্টন সম্পর্কে রাসুল (সা.)-এর হাদিসে সুস্পষ্ট কোনো নিয়ম বর্ণিত হয়নি। তবে, এটি একটি উৎসব ও আনন্দের বিষয় হওয়ায়, নিকট আত্মীয়স্বজনদের সাথে গোশত ভাগ করে নেওয়াই উত্তম। আকিকা করার পর আকিকার গোশত তিন ভাগ করে ভাগ করা যায়। এক ভাগ নিজেরা খেতে পারেন, এক ভাগ গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করতে পারেন এবং বাকি এক ভাগ আত্মীয়স্বজনদের মাঝে বিতরণ করতে পারেন।
আকিকার গোশত রান্না করে সবাইকে খাওয়ানোর আয়োজন করাও একটি বৈধ পদ্ধতি। বর্তমানে সমাজে এই পদ্ধতিটিই বেশি দেখা যায়। আপনি যেকোনো একটি পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। আকিকা করার পর পশুর মাংস বণ্টন করতে পারেন কিংবা আপনার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, গরিব-মিসকিনদেরকে দাওয়াত করে রান্না করে খাওয়াতে পারেন।
আকিকা নিয়ে অনেক কুসংস্কার রয়েছে। এগুলো হচ্ছে আকিকার মাংস পিতা-মাতা খেতে পারবে না বা দাদা-দাদী, নানা-নানি খেতে পারবে না। এগুলো সব মানুষের বানানো কথা যার কোনো হাদিসের বর্ণনা নেই। তাই, আকিকা করার পর পুরো পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং গরিব-মিসকিনদের মিলে একসাথে খেতে পারেন। তবে, এটি যেহেতু একটি উৎসবের মতো, তাই এখানে গান-বাজনা করা যাবে না।
অনেকেই আকিকা করার সময় গান-বাজনা করে থাকেন। আকিকা একটি ইসলামিক রীতি, তাই আকিকা করার সময় এসব পাপ কাজে যুক্ত হওয়া যাবেনা। আকিকা করার নিয়ম অনুসরণ করে পশু জবাই, সবার মাঝে বণ্টন বা তাদেরকে রান্না করে খাওয়ানো, সন্তানের মাথা মুণ্ডন এবং ইসলামিক নাম রাখা এসব কাজ করতে হবে।
আকিকা করার জন্য মন থেকে নিয়ত করলেই হবে যে আপনি আপনার সন্তানের জন্য আকিকা করছেন। আল্লাহর ওয়াস্তে মন থেকে যা নিয়ত করবেন, তাতেই আপনার সন্তানের আকিকার জন্য নিয়ত হয়ে যাবে।
শেষ কথা
আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে আকিকার নিয়ম ও দোয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। পোস্টটি সম্পূর্ণ পড়লে আকিকা করার নিয়ম এবং আকিকা করার দোয়া সম্পর্কে জানতে পারবেন। এছাড়াও, আকিকা করার পর মাংস কীভাবে বণ্টন করতে হবে এবং আকিকা করা সম্পর্কিত কিছু কুসংস্কার নিয়েও আলোচনা করেছি। আরও এমন তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিদিন ভিজিট করুন।
Tag: