Education info

হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে? হিসাববিজ্ঞান কত প্রকার ও কি কি

হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে, হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তি কোথায় এবং হিসাববিজ্ঞানের জনক কে এসব বিষয় নিয়ে আজকের এই পোস্টে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আপনি যদি হিসাববিজ্ঞান সম্পর্কে বিস্তারিত এবং অজানা অনেক তথ্য জানতে চান, তাহলে পোস্টটি শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়ুন।

একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়, সম্পদ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জবাবদিহিতা, নিরীক্ষা ইত্যাদি কাজে যে বিজ্ঞান ব্যবহার করা হয় তাকে হিসাববিজ্ঞান বলে হয়। হিসাববিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যবহার করে একটি প্রতিষ্ঠানের আয় এবং ব্যয়ের হিসাব করা হয়, হিসাব সংরক্ষণ করা হয় এবং সেগুলো নিরীক্ষা করে প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান যাচাই করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলা হয়।

একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান শুরু করার পর সেখানে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক লেনদেন করা হয়। এসব লেনদেন সঠিকভাবে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করার জন্য হিসাববিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যবহার করা হয়। এতে করে, পরবর্তীতে উক্ত ব্যবসায়ের সকল হিসেব সঠিকভাবে পাওয়া সম্ভব হয়। এছাড়াও, হিসাববিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যবহার করার কারণে কখন কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা বিশ্লেষণ করা সহজ হয়।

তো চলুন, হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে, হিসাববিজ্ঞানের জনক কে এবং হিসাববিজ্ঞান সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক।

হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে

হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে ? হিসাববিজ্ঞান হলো কোন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান, যেমন ব্যবসায় বা সংঘবদ্ধ দলের আর্থিক ও অনার্থিক তথ্য পরিমাপণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং যোগাযোগের একটি মাধ্যম। এটি একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে আমরা কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন রেকর্ড, সংক্ষিপ্তসার এবং বিশ্লেষণ করি। এই বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি, ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করতে পারি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করতে পারি।

হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে ? অন্যভাবে বললে, হিসাববিজ্ঞান হলো কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন, সম্পদ, দায় এবং লাভ-লোকসানের রেকর্ড, সংক্ষিপ্তকরণ এবং প্রতিবেদন করার একটি পদ্ধতি। এটি একটি ব্যবস্থাপনার হাতিয়ার যা কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানার পর তা নিরীক্ষা করতে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণেও হিসাববিজ্ঞান সহযোগিতা করে থাকে। হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে ?

হিসাববিজ্ঞানের সংজ্ঞা

নিচে বইয়ের ভাষায় হিসাববিজ্ঞানের কয়েকটি সংজ্ঞা উল্লেখ করে দেয়া হলো। 

  1. হিসাববিজ্ঞান হলো সেই শাস্ত্র যা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের সুষ্ঠু লিপিবদ্ধকরণ এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এর সঠিক ফলাফল নির্ণয়ের পদ্ধতি প্রদান করে।
  2. হিসাববিজ্ঞান কেবল টাকায় পরিমাপযোগ্য কারবারি লেনদেনের লিপিবদ্ধকরণের চেয়ে অনেক বেশি। এটি একটি ব্যবস্থিত পদ্ধতি যা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সরকারের আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যবেক্ষণ করতে সহায়তা করে।

হিসাব বিজ্ঞান কত প্রকার ও কি কি

হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে ? হিসাববিজ্ঞান বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগে বিভক্ত করা যায়, যার মধ্যে প্রধান দুটি হলো ব্যক্তিগত হিসাববিজ্ঞান এবং বাণিজ্যিক হিসাববিজ্ঞান। ব্যক্তিগত আয়, ব্যয়, সম্পদ, দায় ইত্যাদি ব্যক্তিগত হিসাববিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। ব্যবসার আয়, ব্যয়, সম্পদ, দায়, লাভ-লোকসান ইত্যাদি বাণিজ্যিক হিসাববিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত।

এছাড়াও, হিসাববিজ্ঞানের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ শাখা রয়েছে। এগুলো নিচের তালিকায় উল্লেখ করে দেয়া হলো —

  • আর্থিক হিসাববিজ্ঞান
  • ব্যবস্থাপনা হিসাববিজ্ঞান
  • নিরীক্ষা হিসাববিজ্ঞান
  • কর হিসাববিজ্ঞান
  • সামাজিক হিসাববিজ্ঞান
  • বাজেট হিসাববিজ্ঞান

হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে ? হিসাববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সরকার সকলেই হিসাববিজ্ঞান ব্যবহার করে তাদের আর্থিক লেনদেন রেকর্ড ও ট্র্যাক করে। হিসাববিজ্ঞান ব্যবহার করে আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ করা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এবং ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

হিসাববিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য কী

হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে ? হিসাববিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য হলো কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন, সম্পদ, দায় এবং লাভ-লোকসানের রেকর্ড, সংক্ষিপ্তকরণ এবং প্রতিবেদন করার মাধ্যমে আর্থিক তথ্য সরবরাহ করা। এই তথ্য বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষ ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করে। হিসাববিজ্ঞান প্রদত্ত তথ্য থেকে একটি প্রতিষ্ঠানের পরবর্তী করনিয় সম্পর্কে জানা যায়।

এছাড়া, এই তথ্য নিরীক্ষা করে কী সিদ্ধান্ত নিতে হবে তা জানা যায়। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানের লোকসান হলে তা লাভে পরিণত করার উপায় এবং লাভ হলে তা আরও বৃদ্ধি করার উপায় হিসাববিজ্ঞান প্রদত্ত তথ্য থেকেই জানা যায়। নিচে হিসাববিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্যেগুলো বিস্তারিত উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।

হিসাববিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্যগুলো নিম্নে উল্লেখ করে দেয়া হলো —

১. আর্থিক তথ্য সংগ্রহ ও রেকর্ড করা: কোন প্রতিষ্ঠানের সকল আর্থিক লেনদেন রেকর্ড করা, যেমন বিক্রয়, ক্রয়, খরচ, ঋণ, ইত্যাদি। লেনদেন রেকর্ড করার জন্য নিয়মিত ও সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করা। লেনদেনের প্রমাণপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা সহ সকল কাজ হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য।

২. আর্থিক তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ: রেকর্ড করা তথ্যগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ ও সংক্ষিপ্ত করা। বিভিন্ন হিসাব প্রস্তুত করা, যেমন নগদ হিসাব, খরচ হিসাব, সম্পদ হিসাব, দায় হিসাব, ইত্যাদি। হিসাবের নীতি ও নিয়ম মেনে হিসাব প্রস্তুত করা হচ্ছে হিসাববিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য।

৩. আর্থিক তথ্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করা: প্রক্রিয়াজাতকৃত তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করা। প্রতিবেদনগুলো সহজে বোধগম্য ও তথ্যপূর্ণ হওয়া উচিত। প্রতিবেদনগুলো প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগকারী, ঋণদাতা, সরকার, ইত্যাদিদের কাছে সরবরাহ করা।

৪. আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ: প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করা। প্রতিষ্ঠানের লাভ-লোকসান, সম্পদের পরিমাণ, ঋণের পরিমাণ, ইত্যাদি বিশ্লেষণ করা। বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সুস্থতা সম্পর্কে মতামত দেওয়া।

৫. সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা: ব্যবস্থাপনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করার জন্য আর্থিক তথ্য সরবরাহ করা। বিনিয়োগ, ঋণ গ্রহণ, খরচ নিয়ন্ত্রণ, ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিকল্প তৈরি ও মূল্যায়ন করা।

৬. আর্থিক নিয়ন্ত্রণ: প্রতিষ্ঠানের আর্থিক নীতি ও পদ্ধতি তৈরি ও বাস্তবায়ন করা। বাজেট প্রস্তুত ও নিয়ন্ত্রণ করা। খরচ নিয়ন্ত্রণ ও অপচয় রোধ করা।

৭. দায়িত্ব পালন: প্রতিষ্ঠানের আর্থিক তথ্যের সঠিকতা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করা। আইন ও নিয়ম মেনে হিসাববিজ্ঞানের কার্যক্রম পরিচালনা করা। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতি দায়িত্ব পালন করা।

৮. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা: প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যক্রম সম্পর্কে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনাকে আর্থিক কার্যক্রমের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য করা। হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে?

হিসাববিজ্ঞানের জনক কে

হিসাববিজ্ঞানের জনক হচ্ছেন লুকা প্যাসিওলি। তিনি একজন ইতালীয় গণিতবিদ, ধর্মযাজক এবং লেখক। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষে (১৪৯৪ সাল), তিনি “সুম্মা আরিথমেটিকা, জিওমেট্রিয়া, প্রোপোরশনি এট প্রোপোরশনালিটা” নামক বইটি রচনা করেন, যা হিসাববিজ্ঞানের উপর প্রথম মুদ্রিত বই হিসেবে খ্যাতি লাভ করে। এই গ্রন্থে প্যাসিওলি ডবল-এন্ট্রি বুককিপিং পদ্ধতির বর্ণনা দেন যা আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করে।

প্যাসিওলির জন্ম ১৪৪৫ সালে ইতালির বার্গামোতে। ফ্রান্সিসকান ধর্মসম্প্রদায়ের একজন সন্ন্যাসী হিসেবে যোগদানের পর তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যা শিক্ষকতা করেন। লিওনার্দো দা ভিঞ্চির সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল এবং দা ভিঞ্চি প্যাসিওলির বইটির প্রচ্ছদ অঙ্কন করেছিলেন।

প্যাসিওলির ডবল-এন্ট্রি বুককিপিং পদ্ধতি আজও বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি আর্থিক লেনদেন দুটি অ্যাকাউন্টে রেকর্ড করা হয়: ডেবিট এবং ক্রেডিট। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ, দায়, লাভ-লোকসান সহজেই ট্র্যাক করা যায়।

লুকা প্যাসিওলির কাজ হিসাববিজ্ঞানকে একটি সুশৃঙ্খল জ্ঞানের শাখায় পরিণত করতে সাহায্য করে। তার ডবল-এন্ট্রি বুককিপিং পদ্ধতি আর্থিক লেনদেন রেকর্ড ও ট্র্যাক করার জন্য একটি সর্বজনীন পদ্ধতি প্রদান করে। প্যাসিওলির অবদানের জন্য তাকে আধুনিক হিসাববিজ্ঞানের জনক হিসেবে সমাদৃত করা হয়।

শেষ কথা

আজকের এই পোস্টে হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে, হিসাববিজ্ঞান কত প্রকার ও কি কি, হিসাববিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য কী, হিসাববিজ্ঞানের জনক কে এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করেছি। পোস্টটি শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়লে হিসাববিজ্ঞান সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। আরও এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইট প্রতিদিন ভিজিট করুন।

Tag:

হিসাববিজ্ঞান এর জনক কে

হিসাব বিজ্ঞান কত প্রকার

পাবলিক হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে

হিসাব বিজ্ঞানের স্বর্ণ সূত্র কি

হিসাব বিজ্ঞানের ভাইভা প্রশ্ন

হিসাব নিকাশ কাকে বলে

হিসাববিজ্ঞান হতে কি কি তথ্য সংগ্রহ করা যায়

হিসাব সংরক্ষণ কাকে বলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button